বিশ্ব ডিম দিবসে বাকৃবিতে ১০ হাজার ডিম বিতরণ

বাকৃবি প্রতিনিধি:
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়েছে ‘বিশ্ব ডিম দিবস-২০২৫’। দিবসটি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ১০ হাজার ডিম বিতরণ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম কনফারেন্স কক্ষে পশুপালন অনুষদের পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগ ‘ডিম দিবস’ উপলক্ষে একটি সেমিনারের আয়োজন করে।

দিবসটি উপলক্ষে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন ও মাদরাসায় সার্বজনীন ডিম খাওয়ানোর কর্মসূচির আওতায় শিক্ষার্থীদের মাঝে ডিম বিতরণ করা হয়। এছাড়াও, গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের মাঝে ডিম বিতরণ করা হয়। শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে ডিম বিতরণে সহযোগিতা করেছে কাজী ফার্মস।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. শওকত আলী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পশুপালন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রুহুল আমিন, বাংলাদেশ অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবুল হাশেম, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান সরকার এবং ওয়ার্ল্ডস পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফয়জুর রহমান।

এছাড়া আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন পুষ্টিবিদ ও কৃষি ব্যবসা পরামর্শক মো. আক্তারুজ্জামান এবং সাবেক ইউজিসি অধ্যাপক ড. সচ্চিদানন্দ দাস চৌধুরী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস হোসেন। অনুষ্ঠানে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হাই স্কুলের শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, ডিম একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান, যা শিশুদের ছয় বছর বয়সের মধ্যে মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়ক কোলিন সরবরাহ করে। যাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি আছে, তাদের জন্য ডিম বিশেষভাবে উপকারী, কারণ এতে থাকা আয়রন সহজে শোষিত হয়। গর্ভবতী মায়েদের জন্যও ডিম খাওয়া অত্যন্ত জরুরি—প্রতিদিন অতিরিক্ত দুটি ডিম খেলে তাদের প্রয়োজনীয় শক্তির ৪৪ শতাংশ এবং মা ও শিশুর প্রোটিনের চাহিদার ৯১ শতাংশ পূরণ হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে ছয়টি করে ডিম খেলে নারীদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি ৪৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। থাইরয়েডের সমস্যায় থাকা ব্যক্তিরাও নিশ্চিন্তে ডিম খেতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, ডিম বয়স্কদের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। এটি হাড়কে সুরক্ষা দেয় এবং চোখে ছানি পড়া রোধকারী লুটিন ও জিয়াজ্যানথিন পিগমেন্ট সরবরাহ করে। হৃদরোগ, ব্রেন ডিজঅর্ডার ও অ্যালজাইমারসহ বয়স্কদের সাধারণ রোগ প্রতিরোধে ডিমের ভূমিকা রয়েছে। যারা মানসিক চাপ বা উদ্বেগে ভোগেন, তাদের জন্যও ডিম উপকারী—এর মধ্যে থাকা ‘ট্রিপটোফেন’ উপাদান সেরোটোনিন তৈরি করে উত্তেজনা প্রশমন করে। ওজন কমাতে ইচ্ছুকদের জন্যও ডিম আদর্শ খাবার, কারণ সেদ্ধ ডিম দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে, ফলে ক্ষতিকর স্ন্যাকস খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। তরুণরা প্রতিদিন ২-৩টি, মধ্যবয়সীরা ১-২টি এবং বয়স্করা অন্তত ১টি করে ডিম খেতে পারেন।”

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পশুপালন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রুহুল আমিন বলেন, শিশু ও গর্ভবতী নারীদের জন্য ডিম অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, কারণ এটি একটি সস্তা অথচ পূর্ণাঙ্গ প্রোটিনের উৎস। বর্তমানে দেশে প্রায় ২ হাজার ৪০০ কোটি ডিম উৎপাদিত হয়। পোল্ট্রি শিল্প এখন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্প—বস্ত্রশিল্পের পরেই এর অবস্থান। আগে বছরে একটি মুরগি গড়ে ৮০–৯০টি ডিম দিত, এখন উৎপাদন বেড়ে বছরে ৩২০টিতে পৌঁছেছে। এই অগ্রগতির কৃতিত্ব দিতে হবে আমাদের গবেষক ও বিজ্ঞানীদের।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. জি. এম. মুজিবর রহমান বলেন, আমাদের প্রত্যেকের প্রতিদিন ডিম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। শিক্ষার্থীদের মধ্যেও এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। ক্লাসের ফাঁকে বা টিফিন টাইমে অন্য কিছু না খেয়ে ডিম খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। এটি আমাদের শারীরিক গঠন ও মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *