বাকৃবি প্রতিনিধি:
দেশে ডেইরি শিল্পের বিকাশ এবং দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) বর্ণাঢ্য আয়োজনে উৎযাপিত হয়েছে ‘বিশ্ব দুগ্ধ দিবস-২০২৫’। ‘আসুন দুগ্ধশিল্প এবং দুধের প্রভাব উদযাপন করি’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ১৩তম বারের মতো এ আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদের ডেয়রি বিজ্ঞান বিভাগ।
এ উপলক্ষে রবিবার (১ জুন) সকাল ১০টার দিকে বাকৃবি চত্বরে অবস্থিত স্কুলগুলোর ২ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থীকে দুধ পান করানো হয়। এরপর পশুপালন অনুষদের সামনে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে দিবসের উদ্বোধন করেন বাকৃবির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড মো. শহীদুল হক।
এরপর অনুষদীয় ফটক থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন মিলনায়তনে এসে শেষ হয়। এরপর বেলা ১২টার দিকে সেখানে দুগ্ধ দিবসের ওপর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ডেয়রি বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. এ কে এম মামুমের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা ও ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পশুপালন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রুহুল আমিন, নেসলে বাংলাদেশের রেগুলেটরি এন্ড সায়েন্টিফিট এফেয়ার্স প্রধান রেবেকা শারমিন। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাকৃবির ডেয়রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত) ড. এম এ সামাদ খান, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত) ড. মো. নুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি এসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো আবুল হাশেম।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন দুগ্ধ দিবস উদযাপন কমিটির আহবায়ক ও বাকৃবির ডেয়রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড মো. হারুন- অর- রশিদ এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দুগ্ধ দিবস উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও বাকৃবির ডেয়রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক. মোহাম্মদ আশিকুল ইসলাম।
এসময় বাংলাদেশ অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি এসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো আবুল হাশেম বলেন, আধুনিক বিজ্ঞানের আলোকে দেখা যায়, গাভীর দুধে থাকা ল্যাকটোজ ও অন্যান্য নিউট্রিয়েন্ট যেমন ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি১২, প্রোটিন ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের বিকাশ ও স্মৃতিশক্তি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে ৬০ থেকে ৬৯ বছর বয়সীদের জন্য প্রতিদিন ২ থেকে ৩ গ্লাস দুধ পান স্মৃতিশক্তি হ্রাস এবং দ্রুত বার্ধক্য প্রতিরোধে সহায়ক। গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা নিয়মিত দুধ পান করেন, তাদের সার্বিক স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা দীর্ঘস্থায়ী হয়
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা ও ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক বলেন, যখন একটি শিশুর জন্ম হয়, এর পরপরই তার প্রথম খাদ্য হল দুধ। এটি একটি সর্বোৎকৃষ্ট খাদ্য, যার মাধ্যমে শারীরিক, মানসিক ও মেধার বিকাশ হয়। তাই আমি অভিভাবকদের আহবান জানাবো জাঙ্ক ফুড, ফাস্ট ফুডের বদলে দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের প্রতি শিশুদের আগ্রহী করে তুলতে হবে। সুস্থ, মেধাবী ও জ্ঞানসম্পন্ন জাতি গঠনে দুধ পানের বিকল্প নেই।
আরও বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে স্কুলগুলোতে টিফিন হিসেবে দুধ সরবরাহ করা হয়। আশা করি বাংলাদেশেও এটি খুব শীঘ্রই চালু হবে। দুধের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভালো জাতের পশু ও পুষ্টিকর খাবারের দিকে মনোনিবেশ করতে গবেষকদের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। পাশাপাশি পুষ্টিমান বাজায় রাখা ও মূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমাদের ডেয়রি বিজ্ঞান বিভাগ জনগনের মধ্যে দুধ পানের অভ্যাস ও সচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে গত ১২ বছর ধরে দুগ্ধ দিবস পালন করে আসছে। আমি এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। পাশাপাশি দুগ্ধ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের অভিনন্দন জানান তিনি।
এর আগে শনিবার (৩১ মে) দুগ্ধ দিবস উপলক্ষে শিশু কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও হোম কিচেন ডেয়রি রেসিপি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) উদ্যোগে সর্বপ্রথম ২০০১ সালে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস উদযাপন শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশেও এই দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে।