এস, কে, মামুন; গাইবান্ধা:

গাইবান্ধার ভরতখালীর চর—দুর্গমতা, দারিদ্র্য আর বঞ্চনায় ঘেরা এক সময়ের জনপদ। এই প্রতিকূল পরিবেশে মানবসেবার স্বপ্ন দেখেছিলেন কিছু সাহসী তরুণ। নিজেদের সামান্য শক্তি ও অগাধ আগ্রহকে পুঁজি করে ১৯৮৭ সালের ১ ডিসেম্বর তাঁরা প্রতিষ্ঠা করেন ‘হাট ভরতখালী সমাজ কল্যাণ সমিতি’। সময়ের স্রোতে সেই ছোট সংগঠনই আজ পরিণত হয়েছে দেশের একটি পরিচিত উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানে—এসকেএস ফাউন্ডেশন।
উত্তরাঞ্চলজুড়ে দারিদ্র্যপীড়িত ও প্রান্তিক মানুষের উন্নয়নে এসকেএস ফাউন্ডেশন বিভিন্ন বহুমুখী কর্মসূচি পরিচালনা করছে। নারী, শিশু ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি উন্নয়ন, পানি ও স্যানিটেশন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জীবিকায়নসহ নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে সুনাম অর্জন করেছে।
প্রতিষ্ঠানটির বৃদ্ধি, কর্মী গঠন এবং সামাজিক পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় উঠে এসেছে অসংখ্য অনুপ্রেরণাদায়ী গল্প। তেমনই একটি গল্প এসকে মামুনের—যিনি ১৯৯৮ সালের জুনে এসকেএস-এর যাত্রায় যুক্ত হয়ে নির্মাণ করেছেন এক উল্লেখযোগ্য কর্মজীবন।
মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভের চাকরি থেকে সমাজসেবায় যুক্ত হওয়ার অদম্য ইচ্ছাই তাকে নিয়ে আসে গাইবান্ধা উন্নয়ন নেটওয়ার্কের একটি নিয়োগ পরীক্ষায়। সেখানে সফলতা পাওয়ার পর তিনি দ্বিধাহীনভাবে পছন্দ করেন তৎকালীন সমাজ কল্যাণ সংস্থাকে (বর্তমান এসকেএস)। যোগদানের প্রথম দিন থেকেই শুরু হয় তার নিবিড় মাঠপর্যায়ের কাজ—চরবাসীর সেবা, সংগঠন গঠন এবং সম্প্রদায়ের সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে তোলা।
প্রতিকূল নদীপথ পাড়ি দেওয়া, রাতে ডোবার ওপর বাঁশের মাচায় কাটানো, সাপের ভয় এড়িয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়া—এসবই তার প্রাতিষ্ঠানিক যাত্রার অনন্য অভিজ্ঞতা। শুধু সংগঠনের কাজই নয়, চরের মানুষের সঙ্গে পারিবারিক বন্ধনও তৈরি হয় তার। স্বেচ্ছাশ্রম থেকে শুরু করে দায়িত্ব পাওয়া—এমন নানা ধাপে একসময় তিনি প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও পরে প্রোগ্রাম ম্যানেজার পদে উন্নীত হন।
চরের বসতভিটা উঁচু করা, লতাজাতীয় সবজি চাষের নতুন মডেল, কমিউনিটি কন্ট্রিবিউশন ভিত্তিক এনএফপিই স্কুল, কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণের জন্য নদীপথ নৌকা সেবা—এসব উদ্ভাবনী পদক্ষেপ শুধু এসকেএস-এর উন্নয়ন-চিন্তাকে সমৃদ্ধই করেনি, বরং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশংসিত হয়েছে।
এসকেএস ফাউন্ডেশনের নির্বাহী প্রধান রাসেল আহম্মেদ লিটনের দিকনির্দেশনাই এই উদ্ভাবনগুলোর পেছনে ছিল বড় সহায়ক শক্তি। তার ইতিবাচক দৃষ্টি, পরামর্শ এবং কর্মীদের প্রতি গভীর আস্থা মাঠপর্যায়ের পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে।
আজ এসকেএস ফাউন্ডেশন শুধু একটি উন্নয়ন সংস্থা নয়—এটি হাজারো মানুষের আশা, সংগ্রাম ও সফলতার প্রতীক। চরভূমির প্রতিকূলতা পেরিয়ে একটি স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দেওয়ার মহাকাব্যিক গল্পের নাম—এসকেএস ফাউন্ডেশন।