জুলাই স্মরণে বাকৃবিতে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও কারফিউ ভাঙার গান

বাকৃবি প্রতিনিধি 

জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও শহীদদের স্মরণে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও কারফিউ ভাঙার গান আয়োজন করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) জুলাই স্মৃতি পরিষদ। শুক্রবার (১ আগস্ট) সন্ধ্যা সাতটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনের মুক্তমঞ্চে কারফিউ ভাঙার গান আয়োজনের মধ্যে দিয়ে ২ দিনের এই স্মরণ আয়োজন সমাপ্ত হয়।

কারফিউ ভাঙার গান অনুষ্ঠানের শুরুতেই শ্রদ্ধাভরে পাঠ করে শোনানো হয় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ শাহরিয়ার খানা আনাসের লেখা চিঠি। এরপর একে একে পরিবেশিত হয় প্রতিবাদী গান, কবিতা আবৃত্তি ও নাটক। অনুষ্ঠানজুড়ে গানে গানে উচ্চারিত হয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, শহীদদের আত্মত্যাগের স্মরণ এবং নতুন এক সমাজ গঠনের অঙ্গীকার। এছাড়াও জুলাই চেতনা নিয়ে রচিত কবিতা ও নাটক পরিবেশিত হয়। বাকৃবির চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সদস্যরা এসকল পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী ফরিদ, জুলাই স্মৃতি পরিষদ ও চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সদস্যবৃন্দ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

আয়োজক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ জানান, গণ-অভ্যুত্থানের এক পর্যায়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নির্দেশে শুরু হয় কারফিউ ও ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট। কারফিউয়ের রাতগুলোতে আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছাত্র-জনতাকে তুলে নেওয়া হতো জেলে। সেই কারফিউ ভেঙে বিভিন্ন শিল্পী, সাহিত্যিকদের উদ্যোগে ২৬ জুলাই বের হয়েছিল ‘গানের মিছিল’। শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে যুগ যুগ ধরে কণ্ঠে উচ্চারিত হয়ে আসা গান ও কবিতায় আবারও জেগে উঠেছিল রাজপথ। জুলাইয়ের সেই গৌরবময় রুখে দাঁড়ানোর ইতিহাস ও শহীদদের স্মরণে আজ এই ‘কারফিউ ভাঙার গান’ আয়জন। 

পাশাপাশি ২দিনের এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য হিসেবে তিনটি দাবি উত্থাপন করে জুলাই স্মৃতি পরিষদ। দাবিগুলো হলো- সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ জুলাই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত বিচার করতে হবে, আহতদের সুচিকিৎসা ও শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে এবং বাকৃবি ক্যাম্পাসে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি স্মারক’ নির্মাণ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী ফরিদ বলেন, একটি কবিতা, একটি গান কিভাবে মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে পারে সেটি আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেখেছি। জুলাইয়ে আমরা অনেক প্রাণ হারিয়েছি। তাজা রক্তের বিনিময়ে পাওয়া এই নতুন স্বাধীনতা উপভোগের প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের তাদের ত্যাগকে স্মরণ করতে হবে। জুলাইয়ে যে আজানা প্রাণগুলো ঝড়ে গিয়েছে তার বেশিরভাগ ছিলো শ্রমজীবী ও নিম্নবিত্ত মানুষ। অথচ আজ দেশ গড়ার বিভিন্ন কাজে তাদের অংশগ্রহণ আমরা দেখি না। যে বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের কথা ছিলো সেটি আজ আর দেখা যাচ্ছে না। যারা স্বার্থ চিন্তা করে আন্দোলনে গিয়েছিলো তারা এখন নিজেদের স্বার্থ অর্জনে লিপ্ত হয়েছে। আমি সকলকে অবগত করতে চাই, জুলাই আমাদের দেখিয়েছে যে দেশের জনতা জেগে উঠলে কোনো অন্যায়কারীই পার পাবে না।

উল্লেখ্য, এ আয়োজনের অংশ হিসেবে গতকাল (৩১ জুলাই) জুলাই স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় এক বিশেষ আলোকচিত্র প্রদর্শনী। যেখানে স্থান পায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আলোচিত ও স্মৃতি-বিজড়িত ছবি। প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ হাফেজ মো. মাজেদুল ইসলামের পিতা।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *