১৭৪ জনের অনিয়মিত পদোন্নতিতে উত্তাল বাকৃবি, শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জন ও মিছিল 

বাকৃবি বিশেষ প্রতিনিধি:

কৃষিবিদদের প্রতি বৈষম্য নিরসন এবং ৬ দফা দাবি আদায়ে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (৬ মে) ওই দাবি আদায়ে ক্যাম্পাসে সকাল সোয়া ১০টায় একটি বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের জব্বারের মোড় এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথ অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। প্রায় দুই ঘন্টা রেলপথ অবরোধ করে রাখার পর বেলা সাড়ে ১২টায় আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিলে রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়। এরপর বিকেল সাড়ে ৩টায় বাকৃবি উপাচার্যের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপিটি প্রদান করেন শিক্ষার্থীরা।

কৃষি অনুষদ থেকে ইফরান ইউসুফ শিহাব বলেন,”মেধা দিয়ে গড়ি দেশ, মেধাই হক আমার অহংকার। একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হলে আপনাদের অনেক গুলো ফ্লো মেইনটেইন করে আস্তে হয়, এসএসসি, এইচএসসি, তারপর ভর্তি যুদ্ধ। তারপর চান্স পেলে, টপ করলে আপনি কৃষির মত একটি সাবজেক্ট নিয়ে পড়তে পারবেন। পরিসংখ্যান মতে, একটি আসনের জন্য ২৩-২৪ সেশনে ২৪ জন ভর্তিচ্ছু লড়াই করে। তাহলে আপনারা ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীরা কিভাবে অযৌক্তিক দাবি নিয়ে কৃষি সেক্টরকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন তা আমার বুঝে আসে না।”

আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, জুলাই-আন্দোলদের যে মূল ভিত্তি ছিলো কোটা ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ। সেই ভিত্তিকেই অবলম্বন করে আমরা সকল পদে পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্য ব্যক্তি নিয়োগ চাই এবং কে বা কার ইন্ধনে, তারা কৃষি সেক্টরকে অস্থিতিশীল করে তুলছে তা খতিয়ে দেখে তাদের বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।

শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি সমূহ- 

১। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই), বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনসহ (বিএডিসি) অন্যান্য সব গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ১০ম গ্রেড (উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা/ উপসহকারী বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা/সমমান) কৃষিবিদদের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।

২। ডিএই ও অন্যান্য কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে ৯ম ও অন্যান্য গ্রেডে নিয়মিত রি-ভিজিট ও পদবৃদ্ধি করতে হবে।

৩। নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া ব্যতীত ৯ম গ্রেডে (বিএডিসির কোটা বাতিল) পদোন্নতির কোনো সুযোগ রাখা যাবে না। এক্ষেত্রে ১০ম গ্রেডের পোস্টসমূহ গেজেটের আওতার বাইরে স্বতন্ত্র পদসোপান/ প্রচলিত কাঠামো রাখতে হবে।

৪ । কৃষি বিষয়ক ডিপ্লোমাধারীদের জন্য নতুন কোন বিশেষায়িত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।

৫। কৃষি/কৃষি সংশ্লিষ্ট বিষয়ক স্নাতক ব্যতীত নামের সাথে “কৃষিবিদ” পদবী ব্যবহার করা যাবে না। এ বিষয়ে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।

৬। কৃষি বিষয়ক ডিপ্লোমা বা কারিগরি শিক্ষাকে কৃষি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান (ডিএই) এর অধীনেই রাখতে হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন,” আপনাদের যৌক্তিক দাবিতে ভার্সিটি এবং জেলা প্রশাসন আমরা একমত। দাবি আদায়ের পদ্ধতি নিয়ে আমাদের কথা বলতে হবে। আগামীকাল আপনাদের প্রতিনিধিদল ঢাকায় যাবেন। আপনারা জেলা প্রশাসকের বরাবর স্মারকলিপি দিতে পারেন।  আমরা এখন থেকে সেটা উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের ফরোয়ার্ড করে দিব। যারা এই সাথে সম্পৃক্ত না, নিম্ন আয়ের মানুষ আছেন, জরুরি কাজে ঢাকা যাবেন, তাদের জন্য আমরা জনদুর্ভোগ না করি ।”

পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোঃ আবদুল আলীম বলেন,  তোমরা এক ঘন্টার ভিতরে স্মারকলিপি তৈরি করে ফেলো এবং ভিসি স্যারকে দেও। জেলা প্রশাসকের কাছে আমার অনুরোধ যেন মেসেজটা আজকে পৌঁছে যায়। তোমরা জানো আমরা ভ্যাটেরিনারি ফ্যাকাল্টি সব সময় বিভিন্ন আন্দোলনের সঙ্গে থাকি, এখন তোমাদেরও একটা শক্তিশালী লিয়াজু কমিটি দরকার, ঢাকাতে যারা আছে তোমরা তাদের সাথে সমন্বয় কর।’

তিনি আরও বলেন,”নির্দিষ্ট দাবি এবং শক্তিশালী কমিটি নিয়ে আগামী বুধ এবং বৃহস্পতিবার ঢাকা যাওয়া দরকার। তোমাদের কাছে অনুরোধ তোমরা ঢাকা যাও কারণ এটা একেবারেই বাঁচা-মরার প্রশ্ন। ইউনিভার্সিটিতে পড়া গ্রাজুয়েট এবং ডিপ্লোমাধারী দের তুলনা সেটা একেবারেই গ্রহণযোগ্য না। কোন রকম অস্থিতিশীল পরিবেশ যাতে সৃষ্টি না হয়।”

উল্লেখ্য, নিয়ম বহির্ভূতভাবে ১৭৪ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে সহকারি কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করায় আজকের সকল ক্লাস বর্জন করা হয়েছে। সন্ধ্যা ৭ টায় কৃষি অনুষদ এর সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল করবে কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থীরা।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *