বাকৃবিতে শিক্ষার্থী ছয় হাজার, বাস মাত্র পাঁচটি

বাকৃবি প্রতিনিধি

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) সময়ের সঙ্গে অবকাঠামোর উন্নয়ন হলেও শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য বাস সেবার মানোন্নয়ন হয়নি। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে মাত্র ২টি বাস দিয়ে শিক্ষার্থীদের পরিবহন সেবা দেওয়া হলেও বর্তমানে শিক্ষার্থীদের জন্য সচল বাসের সংখ্যা ৫টি । এরমধ্যে ৪ টি ময়মনসিংহ শহর -ক্যাম্পাস রুটের জন্য এবং একটি ফার্ম এলাকায় চলাচলের জন্য। এতো কম সংখ্যক বাস প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য পর্যাপ্ত নয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও শহরের রুটে এসব বাসে বহিরাগত উঠায় শিক্ষার্থীরা জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়ার অভিযোগও রয়েছে। 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানা যায়, বর্তমানে বাকৃবিতে শিক্ষার্থীদের জন্য ৫টি। পরিবহন শাখায় কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ৪টি মিনিবাস, ৫টি অচল বাস, ৪ টি অ্যাম্বুলেন্স সেবা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য ক্লাস চলাকালীন দিনগুলোতে ময়মনসিংহ শহর ও ক্যাম্পাস রুটে প্রতিদিন ১১ টি করে ট্রিপ এবং শনিবার এই রুটে একটি ট্রিপ চালু রয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য ছুটির দিনে ৭ টি ট্রিপ এবং ক্লাস চলাকালীন দিনগুলোতে ফার্ম এলাকায় যাওয়ার জন্য একটি বাস চালু থাকে। 

শহরে যাওয়ার বাসের ট্রিপের তুলনায় যাত্রী বেশি থাকায় শিক্ষার্থীরা ভোগান্তির মধ্যে পরে। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন , বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস সেবায় বহিরাগতদের আধিপত্য থাকায় অনেক আসন তারা দখল করে রাখে। ফলে শিক্ষার্থীদের দাঁড়িয়ে যেতে হয়। অনেক সময় দাঁড়ানোর জায়গাও না পেয়ে অনেক শিক্ষার্থী টিউশনি বা জরুরি প্রয়োজনে অটোরিকশা ভাড়া করে শহরে যেতে বাধ্য হয় । এতে ভোগান্তির পাশাপাশি বাড়তি খরচও গুণতে হয়। 

এ বিষয়ে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মঈন জানান,

“বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে বাসের সংখ্যা শিক্ষার্থীর তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল। এর মধ্যে অনেক সিট কর্মচারী, তাদের পরিবারের সদস্য এবং বহিরাগতরা ব্যবহার করছেন। ফলে আমরা বরাদ্দপ্রাপ্ত সিট থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। বিশেষ করে বিকেল ৫টার দিকে শিক্ষার্থীদের জন্য বাস পাওয়া খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফ‌লে আমা‌দের বাধ্য হয়ে টিউশনি, প্রাইভেট বা জরুরি প্রয়োজনে অটো বা রিকশায় শহরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে সময়, অর্থ এবং নিরাপত্তা—তিনদিক থেকেই আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।” 

তিনি আরও বলেন, “এই সমস্যা সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের জন্য নতুন বাস সংযোজন, শিক্ষার্থীদের বাসে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা, পিক আওয়ারে অতিরিক্ত বাস সার্ভিস চালু করা এবং অভিযোগ জানানোর জন্য হেল্প ডেস্ক বা অনলাইন ফিডব্যাক ব্যবস্থা চালু করা।”

আরেক শিক্ষার্থী জায়েদ হাসান ওয়ালিদ জানান,

“শিক্ষার্থীদের এই সমস্যা দীর্ঘদিনের। সপ্তাহে সাতদিন বাস ট্রিপ চালু এবং বাস ট্রিপের সংখ্যা বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করেছি। কিন্তু প্রশাসন তা গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি। করোনার আগেও বাস ট্রিপ ছিল ২২টি, যা বর্তমানে কমিয়ে ১২টিতে আনা হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি আরও বেড়েছে। বিশেষ করে বিকেলের সময় ট্রিপ কম থাকায় ক্লাস শেষে অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে দাঁড়িয়ে যাতায়াত করতে হয়। ক্লাসের চাপ থাকায় অনেকেই টিউশনি বা ব্যক্তিগত কাজের জন্য ছুটির দিনগুলো বেছে নেয়। অথচ শনিবার মাত্র একটি বাস ট্রিপ চালু থাকে এবং শুক্রবারে কোনো বাস ট্রিপই নেই। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বাস ট্রিপের সংখ্যা বাড়ানো এবং পরিবহন শাখায় জনবল বৃদ্ধি কর‌তে হ‌বে ।”

এ বিষয়ে পরিবহন শাখার পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ গুলজারুল আজিজ বলেন, “শিক্ষার্থীদের এই ভোগান্তির বিষয়টি এখনই জানলাম। অবশ্যই তাদের কষ্ট লাঘবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। করোনার আগে বাস সার্ভিস ২২টি থাকলেও, তখন অনেক আসন খালি থাকত। তাই খরচ কমাতে বাস ট্রিপের সংখ্যা কমানো হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে নতুন একটি বাস কেনার জন্য অর্থ জমা দেওয়া হয়েছে। সেটি শিগগিরই পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।”

তিনি আরও বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে গাড়িচালকের সংকট রয়েছে। ফলে গাড়ির মেকানিকসহ সংশ্লিষ্ট অন্যদের দিয়েও চালক সংকট পূরণ করা হচ্ছে।”

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *