এস. কে মামুন, গাইবান্ধা
আখিদুল চৌধুরী—একজন স্বপ্নবাজ মানুষ, যিনি প্রতিকূল সময় ও সীমিত সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে গড়ে তুলেছেন একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে। তার জীবন কাহিনি শুধু তার ব্যক্তিগত সাফল্যের গল্প নয়, বরং হাজারো তরুণ-তরুণীর জন্য একটি জীবন্ত অনুপ্রেরণা।
১৯৯৭ সালে ব্যাচেলর অব আর্টসে স্নাতক সম্পন্ন করে ঢাকায় পাড়ি জমান আখিদুল। জীবনের প্রথম অধ্যায় শুরু হয় একটি কোম্পানিতে চাকরি দিয়ে। পরিবার ও সন্তানের দায়িত্ব পালনের চাপে, চাকরির পাশাপাশি নিজস্ব কিছু করার ভাবনাও মাথায় ঘোরে। কিন্তু দ্রুতই উপলব্ধি করেন, চাকরি দিয়ে স্বপ্ন পূরণ সম্ভব নয়।
জীবনের মোড় ঘোরাতে সাহসী সিদ্ধান্ত নেন—ফেরেন গ্রামের বাড়িতে। সেখানে শুরু করেন তার স্বপ্নের প্রকল্প: একটি গরুর খামার। স্ত্রী ও পরিবারের সহযোগিতায় মাত্র তিনটি ছাগল ও একটি গরু নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। ছোট উদ্যোগ ধীরে ধীরে বড় পরিসরে রূপ নেয় তার পরিশ্রম, ধৈর্য্য ও পরিকল্পনার মাধ্যমে।
২০২১ সাল আখিদুলের জীবনে এক মোড় ঘোরানো বছর। তিনি সদস্য হন স্থানীয় উন্নয়ন সংগঠন এসকেএস ফাউন্ডেশন-এর। এখান থেকে ব্যবসা ব্যবস্থাপনা ও উদ্যোক্তা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন, যা তার আত্মবিশ্বাস ও দক্ষতা বাড়াতে ব্যাপক সহায়তা করে।
পরবর্তীতে এসকেএস-এর সহযোগিতায় একাধিক ধাপে প্রায় ৭ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। এই অর্থে গবাদি পশু বৃদ্ধি করেন, গড়ে তোলেন একটি পূর্ণাঙ্গ খামার। বর্তমানে তার ফার্মে রয়েছে ১৮টি গাভী (পূর্বে ছিল ৪৯টি) এবং ২০টি ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল। গাভীগুলো প্রতিদিন গড়ে ১.৫ মন দুধ দিচ্ছে, যা স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয় এবং এলাকার পুষ্টি ঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
আখিদুল নিজেই ৭ বিঘা জমিতে চাষ করেন গবাদিপশুর জন্য ঘাস, যার ফলে খাদ্য খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে। তার খামারের বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৩০ লাখ টাকা। পাশাপাশি তিনি মুরগির সেড গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছেন, যাতে বিকল্প আয়ও নিশ্চিত হয
আখিদুলের স্বপ্ন শুধু নিজের জন্য নয়, পরিবারের জন্যও। সন্তানদের উচ্চশিক্ষিত করা ও সমাজে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা তার জীবনের অন্যতম লক্ষ্য। তার মতে, “পরিশ্রম, সঠিক পরিকল্পনা এবং মানসিক দৃঢ়তাই সফলতার চাবিকাঠি।”
আখিদুল চৌধুরীর গল্প প্রমাণ করে দেয়, সীমিত সুযোগ থাকলেও লক্ষ্য ঠিক থাকলে এবং সাহস ও পরিশ্রম সঙ্গে থাকলে সাফল্য অর্জন সম্ভব। তার জীবন কাহিনী দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এবং নতুন উদ্যোক্তাদের সাহস জোগাতে এক উদাহরণ হয়ে থাকবে।