বিশেষ প্রতিনিধি:
আসন্ন কোরবানির ঈদে গবাদি পশুর চড়া দামের পাশাপাশি সংকট তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের প্রভাবে সীমান্তে ব্যাপক কড়াকড়ির কারণে গবাদি পশু না আসা ও দেশে কোরবানিযোগ্য পশুর উৎপাদন কম হওয়ার কারণে এই সংকট তৈরি হবে। তবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, দেশে কোরবানির জন্য গবাদি পশুর যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে, আমাদের প্রস্তুতকৃত গবাদি পশুর সংখ্যা এর চেয়ে বেশি। তাই সংকট তৈরি হবে না, বরং উদ্বৃত্ত থাকবে। কিন্তু এই বক্তব্য মানতে নারাজ মাঠপর্যায়ের ব্যাপারীরা। তারা বলছেন, বৈধ-অবৈধ যেভাবেই হোক, ভারতীয় গরু না এলে বাজারে দাম বেশি হবে এবং পশুর সংকট দেখা দিতে পারে।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৭ জুন ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। কোরবানি কোনো আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং মুসলমানদের অন্যতম ইবাদত। সামর্থ্যবান মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পশু কোরবানি করেন। তাই সারা বছরে যত গবাদি পশুর চাহিদা থাকে, ঈদুল আজহার এক দিনেই ওই পরিমাণ বা তারও বেশি কোরবানিযোগ্য গবাদি পশু বিশেষ করে গরু, খাসি ও মহিষের চাহিদা থাকে।
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭টি গবাদি পশু, আর এবার প্রস্তুত করা হয়েছে ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি, যা গত বছরের তুলনায় ৫ লাখ ৩৩ হাজার ৩০টি কম। এবার প্রস্তুত করা গবাদি পশুর মধ্যে ৫৬ লাখ ২ হাজার ৯০৫টি গরু-মহিষ, ৬৮ লাখ ৩৮ হাজার ৯২০টি ছাগল-ভেড়া এবং ৫ হাজার ৫১২টি অন্যান্য গবাদি পশু।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, কোরবানিতে গবাদি পশুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে। ঢাকা বিভাগে এবার কোরবানির পশুর চাহিদা ২২ লাখ ৩৭ হাজার ৬৮৫টি। দেশের অন্যান্য বিভাগে যেখানে উদ্বৃত্ত রয়েছে, সেখানে ৮ লাখ ৬৫ হাজার ১১৮টি গবাদি পশুর ঘাটতি রয়েছে।
খামারিরা বলেন, এবার গোখাদ্যের দাম অস্বাভাবিক বেশি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গবাদি পশুর দানাদার খাদ্যের দাম বেড়েছে। বাড়তি দামে দানাদার খাদ্য কিনতে হচ্ছে। বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। শ্রমিকের মজুরি অনেক বেশি; ফলে কোরবানির জন্য পশুপালন ব্যয় বেড়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার জানান, কোরবানির হাট সামনে রেখে পশুবাহী ট্রাক ছিনতাই ও ট্রাকে চাঁদাবাজি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। স্থল ও জলপথে গবাদি পশু পরিবহন নির্বিঘ্ন করতে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, জেলা প্রশাসন, জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর যৌথভাবে সহযোগিতা করবে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (হটলাইন ১৬৩৫৮) চালু থাকবে। যে কোনো সমস্যা সমাধানে ফোন করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, মহাসড়কে বা যেখানে-সেখানে হাট বসালে যান চলাচল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে—এমন কিছু যাতে না হয় এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট জেলা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে। জেলা প্রশাসন এ বিষয়ে উপজেলা ও জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজ করবে। সড়ক বা সেতুতে কোরবানির পশুবাহী গাড়িকে প্রাধান্য দেওয়াসহ যাতে রাস্তায় পশু আটকে কৃত্রিম যানজট সৃষ্টি না করা হয়, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গরু চোরাচালান বন্ধে কঠোর বিজিবি। কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে সবকটি সীমান্তে কঠোর নজরদারি শুরু করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। সংস্থাটির সদর দপ্তরের সুত্র মতে তারা চায় দেশে প্রস্তুতকৃত গবাদি পশু দিয়ে কোরবানি হোক। তাদের প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, কোরবানির জন্য পর্যাপ্ত গবাদি পশু আমাদের দেশে আছে। তারা সীমান্তে গবাদি পশু চোরাচালান বন্ধে কঠোর অবস্থানে আছে। গবাদি পশু চোরাচালককে কেন্দ্র করে সীমান্ত হত্যাসহ নানান অপরাধ সংঘটিত হয়। তাই চোরাচালান বন্ধে বিজিবির প্রতিটি ব্যাটালিয়নকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গত বছরের তুলনায় এবার গবাদি পশু কমে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান কালবেলাকে বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে কোরবানিযোগ্য পশুর সংকট আমরা দেখছি না। তবে গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় সাড়ে ৫ লাখ গবাদি পশু কম উৎপাদন হয়েছে। আমরা পরিসংখ্যানে দেখছি, গরুর তুলনায় ছাগলের সংখ্যা কমেছে বেশি।’ এর প্রধান কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘এবার ১৬টি জেলায় মারাত্মক বন্যা হয়েছে। ভয়াবহ বন্যাসহ বিভিন্ন কারণে ছাগল উৎপাদন ব্যাপক হারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজ করবে। সড়ক বা সেতুতে কোরবানির পশুবাহী গাড়িকে প্রাধান্য দেওয়াসহ যাতে রাস্তায় পশু আটকে কৃত্রিম যানজট সৃষ্টি না করা হয়, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গরু চোরাচালান ব, তাতে দেখা যায়, কোরবানির জন্য পর্যাপ্ত গবাদি পশু আমাদের দেশে আছে। বিজিবি সীমান্তে গবাদি পশু চোরাচালান বন্ধে কঠোর অবস্থানে আছে। গবাদি পশু চোরাচালককে কেন্দ্র করে সীমান্ত হত্যাসহ নানান অপরাধ সংঘটিত হয়। তাই চোরাচালান বন্ধে বিজিবির প্রতিটি ব্যাটালিয়নকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছ