কৃষি ও জনপদ ডেস্ক:
৫ আগস্ট—বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলমে লেখা দিন। কেউ বলেন গণঅভ্যুত্থান, কেউ বলেন লাল বিপ্লব, কারও কাছে এটি ছিল বাংলা বসন্ত। গত বছরের এই দিনে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরা স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন, এমনই দাবি করে থাকেন দেশের একটি বড় অংশের রাজনৈতিক সচেতন জনগণ। জনতার ঢেউ, ছাত্র-যুবকদের প্রাণের আর্তনাদ, পুলিশের নির্মমতা এবং সবশেষে সেনাবাহিনীর অবস্থান—সব মিলিয়ে এক নাটকীয় দিন পার করেছিল জাতি।
২০২৪ সালের এই দিনে, পূর্বঘোষিত “মার্চ টু ঢাকা” কর্মসূচির আওতায় হাজারো মানুষ নেমে আসে রাস্তায়। সকাল থেকে রাজধানী ছিল থমথমে, তবে দুপুরের পরই পরিস্থিতি বদলে যেতে থাকে। বাংলাভিশনের সরাসরি সম্প্রচারে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকামুখী মানুষের স্রোত। কারফিউ ভেঙে, গুলির মুখে বুক চিতিয়ে মানুষ নেমে আসে রাজপথে।
চানখারপুল, শাহবাগ, আমিনবাজার, যাত্রাবাড়ি—রাজধানীর প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে চলতে থাকে দমনপীড়ন। তবে মানুষের স্রোত থামেনি। পুলিশের ল্যাথাল উইপনের সামনে দাঁড়িয়েও পিছু হটেনি ছাত্র-জনতা। সে দিনই প্রথমবারের মতো জানা যায়, সেনাবাহিনী গুলি চালাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং তারা প্রধানমন্ত্রীর প্রস্থান চায়।
দুপুর ১টার দিকে সামরিক সূত্রে জানানো হয়, শেখ হাসিনাকে ৪৫ মিনিট সময় দিয়ে বলা হয়েছে দেশ ত্যাগ করতে। এক সরকারি সূত্র মতে, সেনা হেলিকপ্টারে করে তিনি বিমানবাহিনীর একটি কার্গো বিমানে উঠেন, গন্তব্য ভারত। তখনো পুলিশ জানে না এই পালিয়ে যাওয়ার খবর, ফলে সংঘর্ষ চলে আরও কিছুক্ষণ।
বিকেল ৪টায় টেলিভিশন স্ক্রিনে ভেসে ওঠে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের মুখ। ঘোষণা আসে—প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হবে দ্রুত।
জনতা নেমে আসে রাস্তায়—আনন্দ, কান্না, সিজদা। ১৬ বছরের দুঃশাসনের অবসান দেখে অনেকেই অবিশ্বাসে কাঁদতে থাকেন। সেই দিনটি ইতিহাসে লেখা হয়ে গেছে ‘বাংলার গণজাগরণের দিন’ হিসেবে।