বোরো ধান চাষে বিঘা প্রতি কৃষকের লোকসান ৬ হাজার টাকা,ধানের দাম বাড়ানোর দাবি কৃষকের

গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি:

কৃষি-সংশ্লিষ্টরা জানান, বোরো ধানের আবাদ পুরোটাই সেচনির্ভর। জমির প্রকারভেদে ১৫-৩০ বার সেচ লাগে। তবে মৌসুমের শুরুতেই সেচ সংকটে পড়েছেন বোরো চাষিরা। সেচযন্ত্রের জ্বালানি ডিজেল ও বিদ্যুতের দামের পাশাপাশি বেড়েছে সার, কীটনাশক এবং শ্রমিকের মজুরি। ফলে বেড়েছে বোরো ধান চাষে খরচ। এবছর গাইবান্ধায় বোরো ধান চাষে বিঘা প্রতি কৃষকের লোকসান ৬ হাজার টাকা।

কৃষকরা বলছেন, বোরো চাষে খরচ বেড়েছে। মৌসুম শেষে ধানের বাড়তি দাম না পেলে, তাদের উৎপাদন খরচ উঠবে না। সরকারি সংগ্রহ অভিযানে ধান-চালের দাম বাড়ানোর দাবিও জানিয়েছেন তারা।

জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে গাইবান্ধায় বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ২৯ হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে। এখন পর্যন্ত রোপণ হয়েছে ৯৩ ভাগ অর্থাৎ ১ লাখ ২১ হাজার হেক্টরের বেশি।

সরেজমিনে গাইবান্ধা সদর উপজেলার কিছু এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কৃষকেরা বোরো ধানের চারা রোপণ করছেন। আবার কেউ ক্ষেত থেকে আলু তুলে বোরো ধান রোপণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বোরো মৌসুমে এক বিঘা জমিতে ইরি-বোরো ধান রোপণ করতে খরচ হয়েছিল ১২ হাজার থেকে সাড়ে ১২ হাজার টাকা। গত বছরের তুলনায় এবার বিঘাপ্রতি খরচ বেড়েছে দেড় থেকে ২ হাজার টাকা। সেই হিসেবে গত বছরের তুলনায় চলতি বছর বিঘাপ্রতি ১১ থেকে ১৪ শতাংশ বাড়তি খরচ গুণতে হচ্ছে কৃষকদের। প্রতি কেজি বীজ ছিল ২০০ টাকা, এবার তা হয়েছে ৩৫০ টাকা। এছাড়া সার খরচ ২ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। একইসঙ্গে কীটনাশক ৬০০ থেকে বেড়ে ১ হাজার টাকা, ধান রোপণের মজুরি ৪০০ থেকে বেড়ে ৫০০-৬০০ টাকা হয়েছে। এছাড়া আরও অনেক খরচ রয়েছে।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের হাঁসগাড়ি এলাকার কৃষক ছকু মিয়া বলেন, ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়ায় এবার সেচ খরচ বেশি পড়ছে। এছাড়া বীজসহ প্রতিটি জিনিসের দামও বেড়েছে অনেক বেশী।

গাইবান্ধা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক খোরশেদ আলম তথ্য থেকে জানা যায়, বোরো চাষে অতিরিক্ত সেচ লাগে। খরচ কমাতে কৃষকদের পরিমিত সেচ এবং নিয়ম মেনে সার ও কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বোরো মৌসুমে কৃষিতে বাড়তি মনোযোগ না দিলে কৃষি অর্থনীতিতে দেখা দিতে পারে দুই ধরনের সংকট। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় কৃষকের ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে এক ধরনের চাপ তৈরি হতে পারে। আবার বাজারে চালের দাম বাড়লে দরিদ্র ও সীমিত আয়ের মানুষের খরচ বাড়বে। কারণ, ‘দিন আনে দিন খায়’ মানুষের আয়ের বড় অংশ খরচ হয় চালের পেছনে, যা মূল্যস্ফীতিকে উস্কে দেবে। দেশে বাৎসরিক ধান উৎপাদনের প্রায় ৫৫ শতাংশই আসে বোরো থেকে, আর কৃষকরা এপ্রিলের শেষের দিক থেকে এই ধান কাঁটা শুরু করেন।

এফএএস ঢাকা বাংলাদেশের বিভিন্ন অংশ থেকে বোরো ধান চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছে যে তারা এ বছর শস্যটির বাম্পার ফলন আশা করছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কিছু চাষি জানিয়েছেন যে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের স্বল্পকালীন তাপদাহের কারণে শস্যের কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কৃষি মন্ত্রণালয় বর্তমানে তাপদাহের কারণে উৎপাদনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বের করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। চলতি মাসের সপ্তাহ কয়েক আগে মন্ত্রণালয় জানিয়েছেন, তাপদাহের কারণে প্রায় এক লাখ টন বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। ইউএসডিএ’র দেওয়া ক্ষতির পরিমাণ কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) অনুমিত পরিমাণের চেয়ে কম।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *