বাকৃবি প্রতিনিধি
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের ন্যাক্কারজনক হামলা এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সক্রিয় ছাত্রসংগঠনসমূহ। স্বতন্ত্র বিবৃতিতে বাকৃবি শাখা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।
বাকৃবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো আতিকুর রহমান ও সদস্য সচিব মো শফিকুল ইসলামের স্বাক্ষরিত ১ সেপ্টেম্বর একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশিত হয়। গতকাল রাতের হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘৩১ আগস্ট সন্ধ্যায় কম্বাইন্ড ডিগ্রীর যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর বিপুল সংখ্যক বহিরাগত সন্ত্রাসী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। বহিরাগতদের মিছিলে জয় বাংলা স্লোগানও শোনা যায় এবং এসময় পিটিয়ে বহু ছাত্র-ছাত্রীকে মারাত্মকভাবে আহত করা হয়।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ‘বহিরাগতদের মিছিল থেকে ছাত্রীদের উপর সর্বপ্রথম হামলার ঘটনা ঘটে। এছাড়াও হামলা থেকে বাঁচতে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থাপনায় (লাইব্রেরি, দোকানপাট) আশ্রয় নিলে সেখানেও হামলা ভাংচুরের মত ঘটনা ঘটে। কিন্তু এধরনের পরিস্থিতিতেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রয়োজনীয় কোনো তৎপরতা সেখানে ছিল না। সার্বিকভাবে উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ ইসলাম ছাত্রশিবিরের বাকৃবি শাখা এক বিবৃতিতে শিক্ষার্থীদের উপর বহিরাগতদের বর্বরোচিত হামলা এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস ও হল বন্ধের সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গতকাল সন্ধ্যায় ভেটেরিনারি অনুষদ ও পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীদের কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে চলমান আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগত সন্ত্রাসীরা অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। এমনকি বহিরাগতদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে আশ্রয় নেওয়া শিক্ষার্থীদের ওপরও হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এ ঘটনায় নারী শিক্ষার্থী হেনস্তাসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকে গুরুতর অবস্থায় ময়মনসিংহের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ওপর এ ধরনের ন্যাক্কারজনক হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, গতকাল সন্ধ্যায় ভেটেরিনারি অনুষদ ও পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীদের কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে চলমান আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগত সন্ত্রাসীরা অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। এমনকি বহিরাগতদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে আশ্রয় নেওয়া শিক্ষার্থীদের ওপরও হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এ ঘটনায় নারী শিক্ষার্থী হেনস্তাসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকে গুরুতর অবস্থায় ময়মনসিংহের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ওপর এ ধরনের ন্যাক্কারজনক হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের জান-মাল রক্ষা করা এবং শিক্ষার নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রধান দায়িত্ব। স্বায়ত্তশাসিত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাহীনতার চরম বহিঃপ্রকাশ। বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সুযোগ সৃষ্টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য অশনি সংকেত। ঘটনার জেরে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা এবং শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ একটি অযৌক্তিক ও অমানবিক পদক্ষেপ, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’
প্রসঙ্গত, গতকাল রাতে শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলার পর রাতভর সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ টহল দেয়। গতকাল রাত ১১টা ৫ মিনিটে বিজিবির এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাকৃবি এলাকায় উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসকের অনুরোধক্রমে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য আজ (গতকাল) রাত ১০টা ১০ মিনিটে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
এ ছাড়া গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল কর্তৃক উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাত ৯টা ৩০ মিনিটে অনলাইনে অনুষ্ঠিত জরুরি সিন্ডিকেট সভায় আবাসিক হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের আজ সকাল ৯টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।