চলমান সংকট নিরসনে বাকৃবিতে ফের দুই দফা বৈঠক 

বাকৃবি প্রতিনিধি

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) চলমান কম্বাইন্ড ডিগ্রির আন্দোলনের কারণে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস ও হল বন্ধ ঘোষণা করে প্রশাসন। এতে পশুপালন ও ভেটেরিনারি অনুষদের আন্দোলনকারীদের পাশাপাশি অন্য চার অনুষদ ও একটি ইনস্টিটিউটের নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষাও স্থবির হয়ে যায়। এ পরিস্থিতি নিরসনে সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় দুটি আলাদা বৈঠক। একটি ক্লাস-পরীক্ষা চালুর দাবিতে এবং অন্যটি কম্বাইন্ড ডিগ্রি নিয়ে চলমান আন্দোলনের ইস্যুতে।

সোমবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন কৃষি, কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি, মাৎস্যবিজ্ঞান, কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদ এবং ইন্টারডিসিপ্লিনারি ইনস্টিটিউট ফর ফুড সিকিউরিটির শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা। বৈঠকে তারা দ্রুত ক্লাস-পরীক্ষা চালুর দাবি জানান। 

এসময় উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া, ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক, সহকারী ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ এবং সংশ্লিষ্ট অনুষদগুলোর ডিন।

শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা জানান, করোনাজনিত বিরতি ও জুলাইয়ের আন্দোলনের কারণে তারা আগেই অনেক পিছিয়ে আছেন। তার ওপর আবার ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় তাদের একাডেমিক কার্যক্রম পুরোপুরি স্থবির হয়ে গেছে। তারা দ্রুত ক্যাম্পাস খোলার জোর দাবি জানান।

এসময় উপাচার্য অধ্যাপক এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘একাডেমিক কাউন্সিল করে যে কোন বিষয় পাশ-ফেল করার দায়িত্ব এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের। কম্বাইন্ড ডিগ্রির বিষয়টি সার্বিক চিন্তা করে ২৫১ জন শিক্ষকের সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হয়েছে। শিক্ষার্থীরা তাদের চাহিদা বলেছে, সেটা তারা বলতেই পারে। কিন্তু একাডেমিক কাউন্সিল কিভাবে আইন ও ন্যায্যতাকে অনুসরণ করে কাজ করবে, সেটি শিক্ষকরাই ভালো বোঝেন। এটা শিক্ষকদেরই কাজ। ৬৪ বছরের পুরোনো একটি ডিগ্রী বাতিল করে আমরা সেই ৬৪ বছর আগেই ফিরে যাচ্ছি কিনা সেটা দুই থেকে চার বছর পরেই বোঝা যাবে।’

উপাচার্য আরও বলেন, ‘আমরা চাইনি আমাদের ছেলে মেয়েরা বাসায় যাবে, ১৫ দিন পর আবার আসবে। তাদের খরচ, কষ্ট, মা-বাবার বিরক্তি, অনেকের বিসিএস- এজন্য আমরা বিষয়টি এখনো পর্যালোচনা করছি। আমি যতক্ষণ পারবো ততক্ষণই সহ্য করব। আমরা ছাত্র-ছাত্রীবান্ধব, বিরোধী না। এজন্য আমরা শিক্ষার্থীদের কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবি মেনে নিয়েছি। এখানে আর কোন আন্দোলনের যুক্তি নেই, কোন সুযোগ নেই। আমরা আজকে তাদের (আন্দোলনকারীদের) কাছে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানব। তারা যদি বোঝেন তাহলে ভালো। না বুঝলে এটা আমাদের প্রতি অন্যায় করা হবে এবং বেআইনি কাজ করা হবে। আমরা অনেক সহ্য করেছি এখনও করে যাবো কারণ তারা আমাদের ছেলেমেয়ে। আমরা চাই না আমাদের ছেলেমেয়েদের কারোর কোনো ক্ষতি হোক।’

অন্যদিকে সকাল সাড়ে এগারোটায় ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টার কক্ষে তৃতীয় দফায় আলোচনায় বসেন পশুপালন ও ভেটেরিনারি অনুষদের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক, সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. সোনিয়া সেহেলী, ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. জোয়ার্দ্দার ফারুক আহমেদসহ অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ। আন্দোলনকারীরা এসময় ছয়টি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন।

পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থী মঈন ইসলাম বলেন, ‘আমরা ছয়টি প্রস্তাবনা দিয়েছি। আশা করছি শিক্ষকরা উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা করে আজ রাতের মধ্যেই আমাদের একটি সুষ্ঠু সমাধান জানাবেন।’

ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক মো. শহীদুল হক বলেন, ‘ছয়টি প্রস্তাবনার বিষয়ে উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। আজকের মধ্যেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানোর চেষ্টা করব।’

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *